আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোটের আয়োজন করা হবে। অর্থাৎ জাতীয় নির্বাচনের মতো গণভোটও ফেব্রুয়ারির প্রথমার্থে একইদিনে অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে এই ঘোষণা দেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, গণভোটের দিন চারটি বিষয়ের ওপর একটিমাত্র প্রশ্নে আপনি ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দিয়ে আপনার মতামত জানাবেন। এরপরেই জনমতে প্রশ্ন দেখা যায়, চারটি প্রশ্নে আলাদা ‘হ্যাঁ’ ‘না’ উত্তর অপশন থাকবে, নাকি চারটি প্রশ্নে একটাই উত্তর দেওয়ার সুযোগ থাকবে? এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আজাদ মজুমদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, চারটি প্রশ্নের জন্য একটাই উত্তর দিতে হবে। হয় ‘হ্যাঁ’ না হয় ‘না’। তার মানে দাঁড়ায়, কেউ হ্যাঁ উত্তর দেওয়া মানে তিনি সব কয়টির সঙ্গে একমত।
উল্লেখ্য, প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে প্রশ্নগুলো উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হলো— আপনি কি ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫’ এবং জুলাই জাতীয় সনদে লিপিবদ্ধ সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত নিম্নলিখিত প্রস্তাবগুলোর প্রতি আপনার সম্মতি জ্ঞাপন করছেন?
ক. নির্বাচনকালীন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকে গঠন করা হবে। খ. আগামী সংসদ হবে দুই কক্ষবিশিষ্ট। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ জন সদস্য বিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে এবং সংবিধান সংশোধন করতে হলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন দরকার হবে। গ. সংসদে নারীর প্রতিনিধি বৃদ্ধি, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার ও সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিতকরণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি, মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও স্থানীয় সরকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে যে ৩০টি প্রস্তাবে জুলাই জাতীয় সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হয়েছে— সেগুলো বাস্তবায়নে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী দলগুলো বাধ্য থাকবে। ঘ. জুলাই সনদে বর্ণিত অন্যান্য সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাস্তবায়ন করা হবে।”
বিশ্বের কোনও দেশে কোনোদিন এই পদ্ধতিতে ভোট হয়েছে বলে মনে হয় না উল্লেখ করে সাংবাদিক ও কলামিস্ট আমিন আল রশীদ বলেন, ভোটাররা একটি ‘হ্যাঁ’ ‘না’ ভোট দিয়ে চারটি ভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবে কীভাবে? ধরা যাক, কেউ দুটিতে ‘হ্যাঁ’ দেবে আর দুটিতে ‘না’। তাহলে সে কী করবে? হ্যাঁ ও না দুটি বাক্সেই ভোট দেবে? তাহলে তো ব্যালট পেপারটি বাতিল হয়ে যাবে। তিনি বলেন, আমি মনে করি, চারটি প্রশ্নের উত্তরে একটি হ্যাঁ বা না ভোটের এই ধারণাটিই ত্রুটিপূর্ণ। শুধু তাই নয়, জুলাই সনদের ৮৪টি প্রস্তাব ও ৭টি অঙ্গীকারের ওপর গণভোটের ধারণাটিও অযৌক্তিক। কেননা, যে সনদের ওপর গণভোট হবে, সে সম্পর্কে সাধারণ মানুষ কতটা জানে? একজন সাধারণ কৃষক, গৃহিণী বা রিকশাচালক বা কম পড়লেখা জানা মানুষ জুলাই সনদের ভারী ভারী কথা পড়ে বুঝবে, বা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে কেউ তাদের বোঝাবে? এটি সম্ভব?’’আমিন আল রশীদ আরও বলেন, জুলাই সনদের মতো একটি বড় ডকুমেন্ট বা রাজনৈতিক দলিল— যার সবগুলো ধারা ও অঙ্গীকারে রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে ওঠেনি। অনেক প্রস্তাবেই বিএনপিসহ আরও একাধিক দল ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বা আপত্তি দিয়েছে। সুতরাং, যে দলিলের অনেকগুলো প্রস্তাবেই নোট অব ডিসেন্ট রয়েছে, তার ওপর সাধারণ মানুষ ভোট দেবে কী করে, সেই প্রশ্নের সুরাহাই তো হয়নি। বরং নোট অব ডিসেন্ট বাদ দিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদ বাস্তবায়নের যে সুপারিশ করেছে, সেটিও তাদের এখতিয়ার-বহির্ভূত কাজ। এখানে তারা স্পষ্টতই রাজনৈতিক দলগুলোকে উপেক্ষা করেছে।
চার প্রশ্নের এক হ্যাঁ বা না কীভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব প্রশ্নে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাইফুল হক বলেন, গণভোটের জন্য যেভাবে চারটা প্রশ্নের একটা উত্তর ব্যবস্থা করা হয়েছে, পৃথিবীর অতি বুদ্ধিমান, অতি চৌকষ ব্যক্তির জন্যেও এটা প্রায় অসম্ভব। এতগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন একটা হ্যাঁ বা না দিয়ে বলা অসম্ভব। এটা মনে হচ্ছে, নিজেদের সংকট জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হলো। যে উদ্দেশ্যে গণভোট সেটা এভাবে বাস্তবায়ন করা যায় না। নানা পক্ষকে খুশি করতে গিয়ে সরকার বৃহত্তর জটিলতায় পড়েছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
প্রসঙ্গ হ্যাঁ-না : চার প্রশ্নের উত্তর একটাই
- আপলোড সময় : ১৪-১১-২০২৫ ০৬:১৬:৫১ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৪-১১-২০২৫ ০৬:১৬:৫১ অপরাহ্ন
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
স্টাফ রিপোর্টার